বুধবার

১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ২ পৌষ, ১৪৩২

ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলামের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:৫৯

আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১৩:০৭

শেয়ার

ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এস এম নজরুল ইসলামের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
এস এম নজরুল ইসলামের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন শিল্পের পথিকৃৎ এবং ওয়ালটন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আলহাজ এস এম নজরুল ইসলামের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মহৎপ্রাণ এই উদ্যোক্তা ২০১৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। পরদিন ১৮ ডিসেম্বর তাকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নিজ গ্রাম গোসাই জোয়াইরে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।

দূরদর্শী চিন্তাভাবনা ও কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে গড়ে তোলা তার প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন আজ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের শিল্পসমৃদ্ধ সক্ষমতার ইতিবাচক প্রতিচ্ছবি তুলে ধরছে। ‘বাংলাদেশও পারে’—এই আত্মবিশ্বাসকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিষ্ঠিত করতে তার অবদান অনস্বীকার্য।

আলহাজ এস এম নজরুল ইসলাম ১৯২৪ সালের ৭ মে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গোসাই জোয়াইর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন এস এম আতাহার আলী তালুকদার এবং মাতা মোসাম্মৎ শামছুন নাহার।

কর্মজীবনের শুরুতে তিনি পিতা এস এম আতাহার আলী তালুকদারের সঙ্গে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও স্বাধীনতার পর নিজ উদ্যোগে আলাদাভাবে ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসার প্রাথমিক পর্যায়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়লেও সততা, অধ্যবসায় ও কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি সেসব প্রতিকূলতা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেন।

দেশের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত ইলেকট্রনিক্স পণ্য পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৭ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন রেজভী অ্যান্ড ব্রাদার্স, যা পরে আরবি গ্রুপ নামে পরিচিতি পায়। পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ের জনক এস এম নজরুল ইসলাম যে ব্যবসায় হাত দিয়েছেন, সেখানেই সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি সর্বমহলে সমাদৃত ছিলেন।

পরবর্তীতে সন্তানদের সঙ্গে পারিবারিক আলোচনার মাধ্যমে তিনি ‘ওয়ালটন’ নামটি ব্র্যান্ড হিসেবে নির্ধারণ করেন। একই বৈঠকে ‘মার্সেল’ নামটিও চূড়ান্ত হয়। প্রথমে ওয়ালটন ব্র্যান্ড দিয়েই যাত্রা শুরু হয় এবং আরবি গ্রুপ রূপ নেয় ওয়ালটন গ্রুপে, যেখানে তার মেধাবী সন্তানদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

২০০৬ সালে গাজীপুরের চন্দ্রা এলাকায় জায়গা ক্রয় করে ওয়ালটনের নিজস্ব কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুরুতে কিছু প্রতিবন্ধকতা এলেও সেগুলো অতিক্রম করে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে কারখানা নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। ২০০৮ সালে সেখানে ওয়ালটন ফ্রিজ উৎপাদনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়। সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চমানের পণ্য ও উন্নত সেবা দিয়ে দ্রুতই গ্রাহকের আস্থা অর্জন করে প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে টেলিভিশন, মোটরসাইকেল ও এয়ারকন্ডিশনার উৎপাদনেও অগ্রণী ভূমিকা রাখে ওয়ালটন।

বর্তমানে ওয়ালটন বাংলাদেশের শিল্পায়নের একটি অনুকরণীয় মডেলে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ওয়ালটনের কারখানা পরিদর্শন করে এর সক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন।

ব্যবসায়িক সাফল্যের পাশাপাশি আলহাজ এস এম নজরুল ইসলাম সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় ছিলেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলা সমবায় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, টাঙ্গাইল জেলা সার ডিলার সমিতির সভাপতি, টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের পরিচালক এবং টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় জমি বন্ধকি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া নিজ গ্রামে তিনি ‘এস এম নজরুল ইসলাম কারিগরি বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এতিমখানাসহ নানা সামাজিক প্রতিষ্ঠানে তিনি নিয়মিত আর্থিক সহায়তা প্রদান করতেন।



banner close
banner close