জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাম্প্রতিক আন্দোলন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের ঘোষণাসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা সমস্যার প্রভাব পড়েছে দেশের পোশাক খাতে। এসব কারণে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে আগের প্রান্তিকের তুলনায় কমে গেছে পোশাক রপ্তানি। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৯১১ কোটি ডলারের, যা তার আগের প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) তুলনায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ কম। যদিও আগের অর্থবছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় তৈরি পোশাক থেকে রপ্তানি আয় ৩ শতাংশের মতো বেড়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশের তৈরি পোশাক খাত গুরুতর কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়। যেমন– বিশ্ব অর্থনীতিতে নিম্নগতি এবং বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন। গত অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে যা রপ্তানিকে দুর্বল করে তোলে। বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা। ঘোষণাটি ওই প্রান্তিকে বাস্তবায়ন না হলেও তা রপ্তানি আদেশ স্থগিত হওয়া ও ক্রেতাদের মধ্যে অনিশ্চয়তা বাড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একই সময়ে ভারত স্থলপথে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে। যার ফলে লজিস্টিকস কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক বাজারে বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার সীমিত হয়। এসব সমস্যার পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে শুল্ক প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটে। সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণ ব্যাহত হয়। আর বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রতিকূলতা, দেশে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং রপ্তানি বাজারে বৈচিত্র্যহীনতার কারণে অস্থিরতা তৈরি হয় রপ্তানিতে।
উল্লেখ্য, মার্কিন প্রশাসন গত ৩১ জুলাই অন্য দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশি পণ্যেও পাল্টা শুল্কের হার সংশোধন করে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে। গত বৃহস্পতিবার থেকে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় আছে।
১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এর পর থেকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অধ্যাদেশ বাতিল ও যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে প্রায় দেড় মাস আন্দোলন করেন। ২৮ ও ২৯ জুন সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সব কাজ বন্ধ করে দেন তারা। পরে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত অর্থবছরের শেষ সময়টা তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য ভালো ছিল না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে আগের অর্থবছরের একই মাসের তুলনায় পোশাক রপ্তানি কমে যায় ৬ শতাংশ। তবে অর্থবছরটিতে রপ্তানি আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে।
আরও পড়ুন:








