ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের বিচারের দাবিতে দফায় দফায় উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়।
শনিবার সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সাজিদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় সহপাঠী, শিক্ষক এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। জানাজা শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হন এবং দুপুর ১২টায় প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশাসন ভবনের পেছনের ফটক দিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।
উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব দে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘তুমি কে, আমি কে—সাজিদ সাজিদ’, ‘প্রশাসন প্রশাসন, ধৈঞ্চা ধৈঞ্চা’—এমন নানা স্লোগানে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত করে তোলেন।
শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, "সাজিদের মৃত্যু কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়। প্রশাসন যদি দ্রুত স্বচ্ছ তদন্ত না করে, তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।"
বিক্ষোভে সংহতি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকরা। তাঁরা শিক্ষার্থীদের দাবিকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কয়েকটি দাবি উপস্থাপন করেন, যার মধ্যে রয়েছে—
সাজিদের মৃত্যুর দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তপূর্বক রিপোর্ট প্রকাশ, পুরো ক্যাম্পাসকে সিসিটিভির আওতায় আনা, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ, পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট স্থাপন, বহিরাগত প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবিগুলোর প্রতি রেখে সংহতি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, "উপাচার্য ১২ দিনের সফরে ইংল্যান্ডে আছেন। আমি কেবল রুটিন দায়িত্ব পালন করছি, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। ছাত্রদের সহযোগিতা ছাড়া প্রশাসন কিছুই করতে পারে না। আমাদের জনবল সীমিত, তবুও যথাসাধ্য কাজ করছি।"
দিনভর আন্দোলনের পর দুপুরে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় বিশ্ববিদ্যালয়। উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে আগামী ৬ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের পনেরো দফা দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। প্রশাসনের আশ্বাসে বিকালে আন্দোলন স্থগিত করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুর থেকে সাজিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মরদেহের নাক-মুখে রক্ত ও দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। এসব দেখে শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, এটি নিছক পানিতে ডুবে মৃত্যু নয়, বরং ঘটনাটি রহস্যজনক এবং হয়তো পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। সাজিদের বাবা ও সহপাঠীরাও এ মৃত্যুতে সন্দেহ প্রকাশ করে সঠিক তদন্ত এবং প্রকৃত দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:








