মঙ্গলবার

১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১ পৌষ, ১৪৩২

আকু বিল পরিশোধে ইতিহাস গড়ার পথে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩ জুলাই, ২০২৫ ১৩:২৯

শেয়ার

আকু বিল পরিশোধে ইতিহাস গড়ার পথে বাংলাদেশ
ছবি: সংগৃহীত

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) মে ও জুনের আমদানির বিল পরিশোধ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সব ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার পরিমাণের এই বিল পরিশোধ করা হবে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

নিয়মানুযায়ী, প্রতি দুই মাস অন্তর আকুর বিল পরিশোধ করে বাংলাদেশ। তারই অংশ হিসেবে গত ৭ মে মার্চ ও এপ্রিল মাসের আমদানির জন্য ১ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারের পেমেন্ট পরিশোধ করা হয়েছিল। সেই অর্থ পরিশোধের পরও বিপিএম-৬ মানদণ্ডে রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের জুলাইয়ের পর থেকে বিল পরিশোধের পরিমাণ ওঠানামা করলেও ২০২৩ সালের পুরো বছরজুড়ে প্রতি দুই মাস অন্তর পরিশোধ ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের নিচেই ছিল। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে আবার পেমেন্টের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ মে-জুন মাসে তা তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

এদিকে, আমদানির এ উর্ধ্বগতিকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন ব্যাংকাররা। তাদের মতে, এটি ব্যাংকিং খাতে বৈদেশিক মুদ্রার তারল্য পরিস্থিতির উন্নতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এ বিষয়ে কথা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের আগে বাংলাদেশকে প্রতি পর্বেই গড়ে ২ বিলিয়ন ডলার আকু পেমেন্ট করতে হতো। তবে ডলার সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পণ্য আমদানিতে বিভিন্ন ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করার কারণে আমদানি কমতে শুরু করে। একইসঙ্গে আকুর অধীনে থাকা দেশগুলো থেকে আমদানি কমায় পেমেন্টও কমতে থাকে। তবে দেশের রিজার্ভে স্থিতিশীলতা আসায় এবং বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা কমে আসায় আমদানি ফের কিছুটা হলেও বাড়তে শুরু করেছে। যে কারণে আকুভুক্ত দেশগুলো থেকেও আমদানি বেড়েছে, ফলে পেমেন্টও বাড়ছে।’

আরেকজন নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা বলেন, ‘আমদানি বাড়তে থাকলেও তা রিজার্ভকে কমায়নি। গত বছরের জুলাই শেষে বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।’

তবে তার পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ২৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং রপ্তানিতে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ায় রিজার্ভ স্থিতিশীল থেকেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) থেকে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) থেকে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। এই সব কিছুই রিজার্ভ বাড়াতে সাহায্য করেছে। এর ফলে গত কয়েক বছরের তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি এলসি খোলার হার ২.৯৮ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া ভোগ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্যের আমদানি বাড়লেও মূলধনি যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। সেই সঙ্গে মধ্যবর্তী পণ্য ও পেট্রোলিয়ামের আমদানিও কমেছে।

কী কারণে আকুর বিল বেড়েছে, জানতে চাইলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমাদের দেশের গ্রাহকদের চাহিদা আছে, ফলে আমদানি আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে।’

তিনি বলেন, ‘আকুভুক্ত দেশগুলো থেকে আমাদের একটা বড় অংশ আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও রপ্তানির কাঁচামাল আমরা পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি করি। ফলে ওইসব দেশের পেমেন্ট অবলিগেশনও কিছুটা বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের আমদানি, বিশেষ করে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এটি দীর্ঘদিন নেতিবাচক অবস্থানে থাকা দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতির নেতিবাচক অবস্থানও নির্দেশ করে।’

আকু বিল পরিশোধের পরও দেশের ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ বা এনআইআরে পড়বে না কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী এক বছরের মধ্যে কি পরিমাণ বিল পরিশোধ করবে, তা রিজার্ভ থেকে বাদ দেয়ার পরই নিট রিজার্ভ হিসাব করা হয়। এ জন্য আকুসহ অন্যান্য বিল পরিশোধে নিট রিজার্ভে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে রিজার্ভ থেকে যদি ডলার বিক্রি হয় বা সরকার তার কোনো প্রজেক্টে ডলারে বিনিয়োগ বা ঋণ দেয় তাহলেই নিট রিজার্ভে প্রভাব পড়বে।’

প্রসঙ্গত, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর সদর দফতর ইরানের তেহরানে। এটি ভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাএই নয়টি দেশের মধ্যে আঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তি করে।



banner close
banner close