
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন আরও ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। ফলে দেশের অর্থনীতিকে ঘিরে চীনের আগ্রহ বাড়ছে। অবকাঠামো, কৃষি, উৎপাদন, ও প্রযুক্তি—বিভিন্ন খাতে চীনা বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে যৌথ উদ্যোগের প্রবণতাও বাড়ছে। সম্প্রতি আম রপ্তানির নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পর এবার বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পেও আগ্রহ দেখিয়েছে চীন।
রোববার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো দিনব্যাপী চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্মেলন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর যৌথ আয়োজনে এ অনুষ্ঠান হয়। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকার চীনা দূতাবাসসহ বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেয় ২৫০-এর বেশি চীনা ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী। যা এই আগ্রহের বাস্তব প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও। দুই দেশের সরকারি, কূটনৈতিক ও ব্যবসায়িক শীর্ষ নেতারা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। বেজা ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সম্মেলন পরিচালনা করেন।
বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব বানাতে আপনারা এখানে বিনিয়োগ করুন। এখানে তৈরি পোশাক, জ্বালানি, কৃষি, পাট, তথ্যপ্রযুক্তি সম্ভাবনাময় শিল্প।’
বাংলাদেশের মোট জনশক্তির অর্ধেকের বয়স ৩০ বছরের নিচে বলে উল্লেখ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এই তরুণেরা কাজে যোগ দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। তাদের কাজে লাগানোর জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানাই।
সম্মেলনে অংশ নেয় চীনের ১৪৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২৫০ জন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি। এতে ফরচুন ৫০০ কোম্পানির ছয়টি প্রতিষ্ঠানও উপস্থিত ছিল। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে পোশাক খাতের হংডু গ্রুপ ও ওয়েইকিয়াও গ্রুপ, সৌরশক্তি খাতের হুয়ানতাই এনার্জি, ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি খাতের মেড গ্রুপ, এবং অবকাঠামো উন্নয়নে পাওয়ার চায়না ও চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ করপোরেশন।
চীনের চারটি শীর্ষ ব্যবসায়িক সংগঠনও সম্মেলনে অংশ নেয়, যেখানে আলোচনা হয় বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল খাতে যৌথ উদ্যোগ, ইলেকট্রনিকস ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা। প্রায় ৫৫০ জন প্রতিনিধি কারিগরি অধিবেশনে অংশগ্রহণ করেন।
সম্মেলনের সময় ১০০টির বেশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়, যেখানে সম্ভাব্য যৌথ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া মতলব উত্তর উপজেলায় একটি চায়নিজ কৃষি-সৌরভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
বিশ্লেষকরা বলেন, স্বাধীনতার পর এই প্রথম এত বিপুল সংখ্যক বিদেশি বিনিয়োগকারী বাংলাদেশ সফরে এসেছেন, যা বর্তমান সরকারের বিনিয়োগ নীতি ও প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক চীন সফরের ফলাফল। এই সম্মেলন চীন-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
এদিকে বিকেলে মতিঝিলে চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এফবিসিসিআই’র বৈঠক হয়। এসময় কৃষি, প্রযুক্তি, জ্বালানি, চামড়া, অবকাঠামো ও ফিনটেক খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও যৌথ বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছেন চীনা ব্যবসায়ীরা।
বৈঠকে চীনা প্রতিনিধি দলের প্রধান ও সিআইসিসিপিএস-এর ভাইস চেয়ারম্যান চিয়াং চি জানান, ঢাকা সফরে তারা বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এফবিসিসিআই’র সঙ্গে এ আলোচনা দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণে সহায়ক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন তিনি।