
দেশের ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকগুলোকে রক্ষায় সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সদ্য জারি করা ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর আওতায় এখন থেকে যে কোনো সময়, যে কোনো তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে নেওয়া সম্ভব হবে,এমনকি ইসলামিক ব্যাংকগুলোকেও।
১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পাওয়া এই আইনটি গত শুক্রবার গেজেটে প্রকাশ করেছে সরকার। এর মাধ্যমে ব্যাংক একীভূতকরণ, প্রশাসক নিয়োগ, নতুন মালিক নিয়োগ, এমনকি ব্রিজ ব্যাংক গঠন করার সুযোগও পাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক দেউলিয়া হলে সরাসরি সরকারি নিয়ন্ত্রণ
যে কোনো ব্যাংক আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লে বা দেউলিয়ার পথে গেলে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার যৌথভাবে সে ব্যাংকের মালিকানা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দিতে পারবে। এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য মানুষের আমানতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দেশের আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।
ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি বা সম্পদ অপব্যবহারের দায় এবার ব্যক্তিগতভাবে বইতে হবে ব্যাংকের এমডি, চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ কর্তাদের। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পথ খুলে দিয়েছে নতুন আইন। জালিয়াতির অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে, তা আদায় করা হবে আইনি প্রক্রিয়ায়।
'রেজল্যুশন' নামে কঠোর ব্যবস্থা
যেসব ব্যাংকের মালিক বা সুবিধাভোগীরা নিজেদের স্বার্থে ব্যাংকের অর্থ অপব্যবহার করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ‘রেজল্যুশন’ নামে একক ও কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আওতায় আসবে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ, লেনদেন বন্ধ, প্রশাসক নিয়োগ এবং প্রয়োজনে নতুন ব্যাংক গঠন।
ব্রিজ ব্যাংকের মাধ্যমে কার্যক্রম অব্যাহত
সমস্যায় পড়া ব্যাংকের কার্যক্রম যাতে হঠাৎ থেমে না যায়, সেজন্য গঠিত হতে পারে ‘ব্রিজ ব্যাংক’। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে এই অস্থায়ী ব্যাংক চলবে যতদিন না সমস্যার সমাধান হয় বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের হাতে তা হস্তান্তর করা যায়।
ব্যাংক বন্ধের প্রক্রিয়া ও জরিমানা
যদি কোনো ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক আদালতের মাধ্যমে সেই ব্যাংকের অবসায়ন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে। এ সময় সুদ বা চার্জ বন্ধ থাকবে। নিজ থেকে ব্যাংক বন্ধ করতে হলেও নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হবে ৭ দিনের মধ্যে এবং অন্যান্য দেনা ২ মাসের মধ্যে।
ব্যক্তিগত দায় ও বিশাল অঙ্কের জরিমানা
যদি কারও সিদ্ধান্ত, অবহেলা বা কর্মকাণ্ডে ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই ব্যক্তিকে দায় নিতে হবে। আইন ভাঙলে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা হারে অতিরিক্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
ব্যাংকিং খাত সংস্কারে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বড় পদক্ষেপ
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অধ্যাদেশ শুধু দুর্বল ব্যাংক বাঁচানোর পথ নয়,এটি ব্যাংকিং খাতকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ।
চূড়ান্ত লক্ষ্য জনগণের আমানত সুরক্ষা ও আর্থিক স্থিতিশীলতা
সরকারের এই পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের আমানত সুরক্ষা ও ব্যাংক খাতে দীর্ঘমেয়াদি শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
আরও পড়ুন: